Breaking News

পিলখানায় হত্যা হয় ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার

" '"আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া-করিতে পারি নি চিৎকার '"' 25 ' 26 Feb 2009
পিলখানায় হত্যা হয় ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার 



সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করা, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআরের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে মুছে দেওয়া। আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে দুর্বল করা। সীমান্তকে বিপজ্জনকভাবে অরক্ষিত করা, জাতিকে অস্থিতিশীল করা।
বিডিআর এক মহান গৌরবোজ্জ্বল বীর বাহিনী। তার আছে ২০০ বছরেরও দীর্ঘ বীরোচিত ঐতিহ্য। আছে সমৃদ্ধ পেশা-দক্ষতার ইতিহাস। এ বাহিনীর দু-দুজন সৈনিক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠের অধিকারী। সেনাবাহিনীর সঙ্গে এ বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে মিলিয়ে দেশকে বিনির্মাণ করেছে। সীমান্ত রক্ষা করে চলেছে। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী এ বাহিনী দেশমাতৃকার এক ইঞ্চি ভূমিও কখনো কাউকে দখলে নিতে দেয়নি। নিশ্চিত করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে শান্তি, নিশ্চিত করেছে জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা। আমি গর্বিত এ বাহিনীতে আমার বছর তিনেক নিয়োজিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। ডাইরেক্টর অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিং হিসেবে আমি দেখেছি তাদের পেশাগত দক্ষতা, গভীর দেশপ্রেম, শৃঙ্খলাবোধ এবং নিষ্ঠা। আজ বিডিআর নামটাও মুছে গেছে। এ শুধু অতীত ইতিহাস মাত্র পৃষ্ঠায় লেখা। আমি কষ্ট পাই। বিজিবি সুসংগঠিত হোক কামনা করি। বিডিআরের ঐতিহ্য তারা বহন করুক, সাহসী, সমৃদ্ধশালী ও গর্বিত হোক, বহন করুক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ও বীরশ্রেষ্ঠ আবদুর রউফের মহান উত্তরাধিকার।

বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে হত্যার মরণখেলা দেখেছি। এক অশুভ চক্র আমাদের বারবার আঘাত হেনেছে, দেখেছি। দেখেছি মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যা। বঙ্গবন্ধু। তিনিই সেই মহান পুরুষ, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনসত্তার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন, বিকশিত করেছিলেন। বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। লক্ষ-নিযুত মানুষের জনসমুদ্রে গভীর আবেগভরা কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমাদের এই সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আমরা দেখেছি মহান রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের নিষ্ঠুর হত্যা। একাত্তরের ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়া তাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্ফুরণ ঘটিয়েছিলেন। সেই স্ফুলিঙ্গই মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। সমগ্র বাংলার প্রান্তরজুড়ে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে দেয়। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের এই পূতপবিত্র পুণ্যভূমিতে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ, রক্তপাত আর হত্যা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম বীরদের নির্মম নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছি। বীর উত্তম বীর জেনারেল খালেদ মোশারফ, জেনারেল মঞ্জুরসহ অনেক সেক্টর কমান্ডারের মৃত্যু দেখেছি। আমরা দেখেছি জাতীয় মহান চার নেতার জেল হত্যাকাণ্ড। এগুলোর সবই জাতির কপালে বড় বড় কঙ্কক তিলক। এমন ঘটনা বারবার কেন ঘটে চলেছে? কারা আমাদের মহান জাতীয় বীরদের বারবার হত্যা করেছে? কারা বারবার রক্তপাত ঘটিয়েছে? কেন বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার এমন রক্তপাতের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে?
বিডিআরের পিলখানা হত্যাকাণ্ড আমার কাছে মনে হয়েছে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মনে হয়েছে সবই কেমন যেন একই সূত্রে গাঁথা। সবই এক অদৃশ্য ধারাবাহিকতা। আর সবই কেমন যেন এক অদ্ভুতুড়ে অনুদ্ঘাটিত রহস্যপূর্ণ গা-ছমছম করা গোয়েন্দা কাহিনির অংশ। আমরা এর চিরদিনের যবনিকা টানতে চাই। আমরা আর রক্তপাত চাই না। ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্নভিন্ন হোক। সংঘাত আর রক্তপাতের এই ধারা এখানেই শেষ হোক। সকল হিংসা-বিদ্বেষ ষড়যন্ত্র আর উন্মত্ততার সমাধি হোক। শান্তি, সমপ্রীতি ও সমৃদ্ধির এক শক্তিশালী উন্নত নতুন বাংলাদেশের উত্থান হোক।
লে. জে. মাহবুবুর রহমান (অব.): সাবেক সেনাপ্রধান।
: মতিউর রহমান
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভেনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫
ফোন: ৮১৮০০৭৮-৮১, ফ্যাক্স: ৯১৩০৪৯৬,
ইমেইল: infoProthom-Alo.info

No comments